অনলাইন ডেস্ক:
মিয়ানমারের আপত্তির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে নাফ ট্যুরিজম পার্কের উন্নয়নকাজ। কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত জালিয়ার দ্বীপে এই পার্ক নির্মাণের কথা ছিল। দ্বীপটির আয়তন ২৯১ একর। নাফ নদী থেকে পার্কের জন্য বালু তোলা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে মিয়ানমার।
বেজা থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নাফ ট্যুরিজম পার্কের মহাপরিকল্পনা অনুমোদন দেয় সরকার। সেখানে পর্যটকদের থাকার জন্য হোটেল ও ইকো কটেজ, যাওয়ার জন্য কেব্ল কার, ঝুলন্ত সেতু ও ভাসমান জেটি নির্মাণের কথা। দ্বীপটিতে শিশুপার্ক, পানির নিচের রেস্তোরাঁ, ভাসমান রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন পর্যটন স্থাপনা করার পরিকল্পনাও রয়েছে বেজার।
এক প্রতিবেদনে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন উল্লেখ করেন, দ্বীপটি এখন মহিষের চারণভূমি। বর্তমানে সেখানে উন্নয়নকাজ বন্ধ আছে। তিনি বলেন, নাফ নদী থেকে না নিয়ে বিকল্প উপায়ে মাটি আনতে গেলে খরচ অনেক বেশি পড়বে। সেই পথে যাওয়া যাবে না।
বেজার তথ্য বলছে, ট্যুরিজম পার্কের প্রথম পর্যায়ে ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। কাজটি পেয়েছিল এম এম বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নাফ নদী থেকে মাটি তুলে ভরাটের কাজ ৫০ শতাংশ করে ফেলেছিল তারা।
বেজা সূত্র জানায়, ২০২২ সালের শুরুর দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানায় মিয়ানমার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বেজাকে জানায়। এদিকে বিকল্প কোনো উপায় না পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাটি ভরাটের কাজ শেষ না করে চলে যায়।
বেজার কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমার সরকার আপত্তি জানিয়ে বলেছে নাফ নদীতে খনন (ড্রেজিং) করতে হলে পারস্পরিক সম্মতি লাগবে। সেক্ষেত্রে তারা নাফ নদীর পানি প্রত্যাহার ও অন্যান্য বিষয়ে ১৯৬২ সালে সম্পাদিত একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। টেকনাফের আরেক পর্যটনকেন্দ্র সাবরাংয়ের জন্য নাফ নদী থেকে মাটি তোলার সময়ও (২০১৯) মিয়ানমার আপত্তি জানিয়েছিল। বেজা তখন শাহ পরীর দ্বীপের আশপাশ থেকে মাটি আনে।
মিয়ানমার আপত্তি জানানোর পর ২০২২ সালের শুরুর দিকে টেকনাফে প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাই, মিয়ানমারও তাদের অংশে ড্রেজিং করছে। সব তথ্য–উপাত্ত নিয়ে আমরা দেশটির কাছে অভিযোগ জানাই। তারপর তারাও ড্রেজিং বন্ধ করে।’
বেজা সূত্রমতে, নাফ ট্যুরিজম পার্ক অব্যবহৃত না রেখে বিদেশি কোনো কোম্পানিকে কাজটি দিতে চায় সরকার। এমন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে চায়, যারা ভূমি উন্নয়নসহ পুরো অবকাঠামোর কাজ করবে। কিন্তু সে রকম প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাচ্ছে না। তুরস্ক ও জার্মানির দুটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছিল। তবে এখন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমানে বেজা নাফ ট্যুরিজম পার্কে বিনিয়োগ পেতে চীনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। গত বছর ঢাকায় চীনা দূতাবাসকে চিঠি দিয়ে বেজা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। এর কারণ হলো, বেজা মনে করছে চীনা বিনিয়োগকারী কাজটি পেলে নাফ নদী থেকে মাটি তোলার ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে রাজি করাতে পারবে।
চীনা দূতাবাসে দেওয়া চিঠির বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, এখনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
সুত্র: প্রথমআলো
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।